করোনার থেকেও বেশি ছোয়াঁচে চিকেন পক্স



বিশেষজ্ঞরা বলছেন উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে  ।

বসন্ত আসতে ঢের দেরি। তার আগেই শহরে চোখে পড়ছে জলবসন্ত থুড়ি চিকেন পক্সের বাড়াবাড়ি। ইতিমধ্যেই  শহরের একাধিক চিকিৎসকের চেম্বারে উপচে পড়ছে ভীড়। কেন অসময় চিকেন পক্সের আক্রমণ?


চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণেই ভ্যারিসেল্লা ভাইরাস ( varicella-zoster virus ) মাথাচাড়া দিয়েছে।  শীতেও কপালে বিন্দুবিন্দু ঘাম। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে উত্তুরে হাওয়া বাধা পেতেই বাড়ছে তাপমাত্রা। আর আচমকা গরম পড়তেই ভাইরাসদের পোয়াবারো। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, সাধারণত শীত চলে যাওয়ার সময় এই ভাইরাস মাথা চাড়া দেয়। শীতে আকস্মিক গরমের কারণে যাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের উপর আঘাত হানছে ভ্যারিসেল্লা ভাইরাস।



ডা. দলুইয়ের কথায়, এই ভাইরাসের আক্রমণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাময়িকভাবে কমে যায়। দেখা দেয় নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, কাশি, পেটের গোলমালের মতো অন্যান্য অসুখ। হাঁপানি বা সিওপিডির মতো কোনও পুরনো বা জটিল রোগ থাকলে জলবসন্ত হওয়ার ফলে তা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকেন পক্সে কারও উপসর্গ নামমাত্র। কারও আবার ধূম জ্বর। গুটি উধাও হওয়ার পরেও কয়েক সপ্তাহ বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না কেউ কেউ। চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনুযায়ী ঠিক হয়, কতটা প্রভাব ফেলবে জলবসন্ত।


ভাইরাস আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গেই গায়ে গুটি বেরোয় না। প্রথম দিকটায় হালকা জ্বর, হাঁচি, কাশি ক্লান্তি আর চোখ জ্বালাই হচ্ছে অন্যতম উপসর্গ। চিকিৎসকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, ভাইরাস শরীরে প্রবেশের প্রথম পাঁচ দিনই সবচেয়ে ভয়ংকর। জনস্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, ওই সময় সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি গেলেই বিপদ। করোনার থেকেও দ্রুত ছড়ায় এই ভাইরাস। একটি বদ্ধ ঘরে একজন সংক্রামিত ব্যাক্তির থেকে পঞ্চাশ জনের চিকেন পক্স হতে পারে।


সেই কারণেই সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অসুখ ঠেকাতে নিমপাতা আর সজনে ফুলে ভরসা রাখতে বলছেন চিকিৎসকরা। শহরের মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রতিদিন স্নানের সময় জলে নিমপাতা ফেলে স্নান ও পাতে নিমপাতা রাখলে এই অসুখ রোখা অনেক সহজ। ফি দিন খাবারের পাতে রাখতে হবে সজনে ফুলও। শরীরে ভাইরাস প্রবেশের ৫/৬ দিন পরে বুকে পিঠে, মুখে এবং পরবর্তী কালে হাত-পা ও মাথায় বিভিন্ন আকারের দানা দেখা যায়। এক দু’দিন পরে সেগুলি আকারে বড় হতে থাকে। পরে সেগুলির মধ্যে তরল জমা হয়ে ফোস্কার আকার নেয়। আরও পরে পুঁজ হয়। হাত-পায়ে যেহেতু চুলকানির প্রবণতা থাকে, তাই সামান্য নখের আঁচড়েই সেগুলি ফেটে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তবে ১২ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।