ঋতু বদলের সময় ভাইরাস বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বাচ্চার যত্ন নেবেন কীভাবে? মিলিয়ে নিন চেকলিস্ট!


এরই মধ্যে হানা দিচ্ছে হাজারো ইনফেকশন, অ্যালার্জিরা। ভাইরাল ফিভার, ডেঙ্গি থেকে শুরু করে সাধারণ ডায়েরিয়া- পিছু ছাড়ছে না কেউই। এই কটা মাসই তাই সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিত্সকরা। আর সবচেয়ে বেশি সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে সকাল বেলায়। কেননা চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, দিনের আলোতেই ভাইরাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে ছোট্ট শিশুদের উপর! Viral infections in babies in Bangla.

খুচখাচ অসুখ-বিসুখ যেন লেগেই থাকে তাদের। আজ হাঁচছে, কাল কাশছে আবার পরশু হয়তো পেট খারাপের খপ্পরে পড়ে কেঁদে একসা হচ্ছে। কী করবেন বলুন তো একরত্তিগুলোকে নিয়ে? বেচারাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা যে ততটাও শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি, তাই ভাইরাসের দল মাঝে মাঝেই আস্তানা গেড়ে বসে শিশুর শরীরে। কয়েকদিন থাকে, বাচ্চাটির ওপর অত্যাচার করে, তারপর আবার অন্য কারও শরীরে বাসা বাঁধতে যায়। যেসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের তো এক ভাইরাসের হামলা থেকে সেরে উঠতে তর দেয় না আরেক ভাইরাস। Viral Infection in Babies and How to Protect in Bangla. Shishur viral infection.



আবার বাচ্চা স্কুলে যেতে শুরু করলে তো কথাই নেই, অন্য বাচ্চার শরীর থেকে মহানন্দে ভাইরাস চলে আসবে আপনার বাচ্চাটির শরীরে, এতটাই সে সংক্রামক। ঋতু বদলের সময় ভাইরাস বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায়, কী করবেন আপনি? ভাইরাল ইনফেকশনের হাঁড়ির খবর জানা থাকলে হয়তো তাকে খুন্তি পেটা করতে বেশি সুবিধা হবে আপনার। ঘন ঘন ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শিশুকে বাঁচাবেনই বা কীভাবে? এই তো, এইখানেই রইলো সব সমাধান। আসুন একসাথে পড়ি।


ভাইরাল ইনফেকশন কী? (What is viral infection)-> ভাইরাসের প্রভাবে আমাদের শরীরে যে অসুস্থতার সৃষ্টি হয়, তাকেই ভাইরাল ইনফেকশন বলা হয়। ভাইরাস বা বিভিন্ন আণুবীক্ষণিক জীবাণু আমাদের শরীরের যে কোনও অংশে সুস্থ কোষকে কব্জা করে। সেই ভাইরাস সংক্রমিত কোষ থেকে আরও ভাইরাস জন্ম নেয়। সাধারণত, ভাইরাসের জীবনচক্রের একটা নির্দিষ্ট সময়কাল থাকে, মানুষের শরীরে সেই সময়কাল পর্যন্ত ভাইরাস বেঁচে থাকে ও শারীরিক নানা অসুবিধার সৃষ্টি করে।

বাচ্চার ভাইরাল ইনফেকশন হলে কীভাবে তার যত্ন নেবেন? (How To Take Care Of Your Child?)


বাচ্চার কোনও রকম ভাইরাল ইনফেকশন হলে ডাক্তার ভাইরাসের ধরন অনুযায়ী ওষুধ দেবেন। কিন্তু, ভাইরাস জনিত যে কোনও ইনফেকশন একটা নির্দিষ্ট কাল থাকেই। বাচ্চাকে ওষুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ওকে আরাম দিতে আপনি যা করতে পারেন,


বাচ্চাকে যতটা সম্ভব হয়, বিশ্রাম নিতে দিন। সঠিক বিশ্রামে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় ও বাচ্চা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।


প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ান বাচ্চাকে।


স্বাভাবিক খাবার দিলেও রান্না যেন হয় কম তেলমশলায়।


গলা ব্যথার জন্য যদি বাচ্চা শক্ত খাবার খেতে না চায়, ওকে চিকেন স্ট্যু, সব্জির স্যুপ, ফলের রস ইত্যাদি বানিয়ে দিন।


বাচ্চার জ্বর হলে ওকে স্নান না করিয়ে ফেলে রাখবেন না। ওর মাথা ধুইয়ে দিন ও গা স্পঞ্জ করে দিন। বাচ্চা আরাম পাবে।


বাচ্চার নাক বন্ধ থাকলে একটু উঁচু বালিশে ওকে শুতে দিন আর ড্রপ দিতে পারেন।


একটু বড় বাচ্চার ক্ষেত্রে গার্গল করা বা গরম জলের ভাপ নেওয়া খুবই উপকারী।


সকালে তুলসীপাতা, আদা ও মধু খাওয়াতে পারেন, বানিয়ে দিতে পারেন আদা চা বা দুধ-হলুদ। বেশ ঝরঝরে লাগবে বাচ্চার নিজেকে।


বাচ্চার ঘরে কাউকে বেশি আসতে দেবেন না।


বাচ্চার ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসে। আলো-বাতাসে অনেক জীবাণু নষ্ট হয় ও ঘরের বাতাস শুদ্ধ হয়।


ভাইরাল ইনফেকশন প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি? (Tips To Prevent Viral Infection In Babies)


বাচ্চার সমস্ত টিকাকরণ নির্দিষ্ট সময় মেনে করুন।


খাবার আগে সবসময় সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ধোওয়ার সুঅভ্যাস গড়ে তুলুন।


বাজারের কাটা ফল বাচ্চাকে খাওয়াবেন না।


যেখানে সেখানে পানীয় জল দেবেন না বাচ্চাকে। প্রয়োজনে ওর খাবার জল বাড়ি থেকে নিয়ে যান।


বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে, কোনও ভাইরাসই ওকে সহজে কাবু করতে পারবে না। ছোট থেকেই বাচ্চা যাতে সুষম পুষ্টি পায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।


পরিবারের কারও যদি ভাইরাল ইনফেকশন হয়ে থাকে, তা হলে বাচ্চাকে তার কাছে কয়েকটা দিন যেতে দেবেন না।


বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার অভ্যেস তৈরি করুন। বাইরে থেকে এসে হাত-পা ধুতে হয়, বাথরুম ব্যবহার করে তা পরিষ্কার করে রাখতে হয়, নখ খেতে নেই ইত্যাদি সুঅভ্যাস ভবিষ্যতে অনেক রোগব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করবে ওকে।


বাচ্চা একটু বড় হওয়ার পর ওকে নিজের আলাদা তোয়ালে, আলাদা সাবান ব্যবহার করতে শেখান। Viral Infection in Babies and How to Protect in Bangla.


মনে রাখুন কিছু কথা (Points To Remember)


বাচ্চা খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে যেমন, প্রচণ্ড জ্বর হলে, মলের সাথে রক্ত বেরোলে, একদম না খেলে, নেতিয়ে পড়লে, শ্বাসকষ্ট হলে সত্বর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।


কাশি সাধারণত একটু বেশি দিন থাকে, তাও যদি দেখেন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দিন ধরে কাশি হয়ে যাচ্ছে, তা হলে ডাক্তার দেখান।


নিজে নিজে কোনও ওষুধ বাচ্চাকে দেবেন না। ডাক্তার দেখিয়ে তবেই ওকে ওষুধ দিন।


বাচ্চার ভাইরাল ইনফেকশন সম্পূর্ণ না সারলে ওকে স্কুলে পাঠাবেন না।


ছোট বাচ্চা যেহেতু নিজে নিজে ঠিক করে পরিষ্কার হতে পারে না, তাই বাচ্চাকে বাথরুম ব্যবহার করার পর ঠিক করে পরিষ্কার করে দিন এবং পরিষ্কার রাখুন বাথরুমও।


বাচ্চা একটি ভাইরাল ইনফেকশনে ভোগার পরে বেশ কয়েকদিন ওকে সাবধানে রাখুন। না হলে দুর্বল শরীরে আবার হানা দিতে পারে অন্য কোনও ভাইরাস।